জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গা - Opene99

Breaking

Click here

Wednesday, November 13, 2019

জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গা

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য সংসদে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। এর আগে নূর হোসেনের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি।

বুধবার সংসদ অধিবেশন শুরু হলে তাতে যোগ দেন মশিউর রহমান রাঙ্গা। পরে তিনি পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে স্পিকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি সবার কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাচ্ছি। আমি তিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছি। আমার হয়তো ভুলত্রুটি হতে পারে।

গত রবিবার জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ইয়াবাখোর ও ফেনসিডিলখোর বলেন মশিউর রহমান রাঙ্গা।

সেদিন জাপা মহাসচিব বলেছিলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন। নূর হোসেনকে? নূর হোসেন কে? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর।’

রাঙ্গার দাবি, নূর হোসেনের হত্যার ঘটনায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ বা তার সরকার দায়ী ছিল না। যে ধরনের গুলিতে নূর হোসেন মারা গেছেন, সে ধরনের গুলিও তখন পুলিশ ব্যবহার করত না।

নূর হোসেনকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন জাপা মহসচিব। রাঙ্গার এমন বিতর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে নূর হোসেনের পরিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয়। নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবি এমন বক্তব্যের জন্য রাঙ্গাকে জাতির সামনে ক্ষমা চাইতে বলেন।

গতকাল জাতীয় সংসদেও সরকারি দলসহ নিজ দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও রাঙ্গার তীব্র সমালোচনা করেন। সংসদে দাঁড়িয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্যও দাবি ওঠে। তবে ওই সময় জাপা মহাসচিব সংসদে উপস্থিত ছিলেন না।

সমালোচনার মুখে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নিজের বক্তব্যের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন উল্লেখ করে নূর হোসেনের পরিবারের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন রাঙ্গা। বুধবার জাতীয় সংসদে গিয়ে নিজের বক্তব্যের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চান রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রাঙ্গা।

জাপা মহাসচিব বলেন, ‘আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমার কলিগরা আমার এটা শুনে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর প্রধানমন্ত্রী আমাকে প্রতিমন্ত্রী বানিয়েছেন, হয়তো আমার দল ক্ষমতায় থাকলেও মন্ত্রী হতে পারতাম না।’

মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও যদি নিজের অজান্তেই কোনো কটূ কথা বলে থাকি, সেজন্য আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই।’

সংসদ অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে কার্যপ্রণালী বিধির ২৭৪ বিধিতে ব্যক্তিগত কৈফিয়ত সম্পর্কিত ধারায় তিনি একথাগুলো বলেন।

রাঙ্গা বলেন, ‘গত ১০ নভেম্বর জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র দিবস পালন নিয়ে একটি সভা ছিল, ছোট্ট পরিসরে। মাইক বাইরে ছিল না, ভেতরে সাউন্ডবক্সের মধ্যে আমরা কথা বলেছি। নূর হোসেন দিবসও একই দিন ছিল। আমাদের ওখানে পুরান ঢাকা থেকে তখন কিছু লোক আসছিল নূর হোসেন চত্ত্বরে ওখানেই এরশাদ সাহেবকে গালাগালি করে এরশাদের দুই গালে জুতা মার তালে তালে এইভাবে কিছু কথা বার্তা শোনার পরে, ওনারা আমাদের অফিসে এসে বলেন। আমি দলের মহাসচিব হিসেবে ওনাদের শান্ত থাকতে বলি। এসময় হৈ চৈ করেন।’

জাপা মহাসচিব বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের সিনিয়র মন্ত্রিগণ ওনারা আমার সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন। আমি মনে করি ওনারা আমার সম্পর্কে যেভাবে কথা বলেছেন, ওনাদের কথাগুলো আমি মনে করছি ওনারা আমাকে শাসন করেছেন। আমি ভুল করেছি একটা। ভুল করার জন্য তার পরিবারকে অর্থাৎ নূর হোসেনের পরিবারের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করেছি এবং বিবৃতিও পর্যন্ত দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কালকে (মঙ্গলবার) যখন এখান থেকে পরামর্শই বলেন, কিংবা আর যাই বলেন আমার সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন, আরও অনেকেই বলেছেন। আমি জাতির জনক সম্পর্কে মূলত এই সংসদে প্রথম দিন প্রথম পার্লামেন্টে ৩৭টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম। তখন সৈয়দ আশরাফ সাহেব ছিলেন তার পক্ষে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এখানে দাঁড়িয়ে ৩৭টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম, অজস্র বার জয়বাংলা বলেছি, অজস্রবার আমি জাতির পিতা সম্পর্কে বলেছি। সুতরাং জাতির পিতা নিয়ে যদি আমার কোনো রকম কোন কিছু ভুল বলে থাকি সেজন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি। নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি।’

বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ বলেন, ‘আমরা মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচন করেছি। ২০১৪ সালে শীতের মধ্যে আমি ও শাজাহান খান সাহেব আমরা ১৮দিন হেলিকপ্টারে দেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছি পরিবহন চালু রাখার জন্য, এই সরকারের জন্য কাজ করেছি। সেখানে আমি প্রধানমন্ত্রীকে সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতিবাজ এগুলো বলিনি। আমি বলেছি বিশ্বজিৎও এই সময় হত্যা হয়েছে, ক্যাসিনো নিয়েও বিচার হয়েছে। আমি বলেছি ১৯৯০ সালের পর যখন খালেদা জিয়া আসলেন ১৮জন কৃষককে হত্যা করা হয়েছিল সেসময়। গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। এই অস্ত্র বাইরের দেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তৎকালীন বিরোধী দলের নেতাকে হত্যা করার জন্য। এই কথাগুলো রেকর্ড আছে। তারপরেও আমি নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাচ্ছি যদি এটা ভুল করি। অবশ্যই আমি করজোড়ে তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমার কলিগ আছেন তারা এটা শুনে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’

রাঙ্গা বলেন, ‘আমি মনে করি আমার দল ক্ষমতায় থাকলেও হয়তো মন্ত্রী হতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন অনেক স্নেহ করতেন অনেক ভালোবাসতেন। সেই সম্পর্কটা ওনার সঙ্গে থাকবে এবং ছিল জন্যই ওনি আমাকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি কাউকে কটাক্ষ করে কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমি সমস্ত দোষ আমার ঘাড়ে নিচ্ছি। আমার হয়তো বলতে ভুলত্রুটি হতে পারে। আমি তিন দিন যাবৎ জ্বরে ভুগছি। আমি আসতে পারিনি। কালকে আসলে কালকেই জবাব দিতে পারতাম। নূর হোসেন কিন্তু মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা গুলি করে বা এরশাদ সাহেব গুলি করে মারুক বা না মারুক এটা সত্য যে ওনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে পত্র দিয়েছি।’

জাপা মহাসচিব বলেন, আমার ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।

The post জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গা appeared first on One News BD | 1 News BD | One News | 1 News.



from One News BD | 1 News BD | One News | 1 News https://ift.tt/2qSZaMt
via opene99

No comments:

Post a Comment